Sunday, July 15, 2018

মাদকবিরোধী অভিযানে পক্ষপাতের অভিযোগ

বাংলাদেশে চলমান মাদকবিরোধী যুদ্ধের পক্ষপাতমূলক আচরণের সবচেয়ে বড় শিকার হচ্ছে উর্দুভাষী বাংলাদেশি বা বিহারি জনগোষ্ঠি।
বিশেষ করে মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পে র্যাবের গত ২৬ মে পরিচালিত অভিযানে অনেক হয়রানি ও অন্যায় আচরণের অভিযোগ উঠেছে। ক্যাম্পের সব প্রবেশ পথ বন্ধ করে দিয়ে ডগ স্কোয়াড নামিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা এই অভিযান চালানো হয়। প্রাথমিকভাবে ৫০০জনকে আটক করা হয়। ৩০০জনকে ছেড়ে দেয়া হয়। যাচাই-বাছাই করে ১৫৩জনকে রেখে বাকিদেরও ছেড়ে দেয়া হয়।
মাদকবিক্রেতাদের সাথে সাথে অনেক নিরীহ মানুষও গ্রেপ্তার হয়েছেন ও সাজা ভোগকরছেন। জেনেভা ক্যাম্পে এরকম কয়েকজনের কাছের মানুষের সাথে কথা বলে বেরিয়ে এল এই সত্যগুলো।
সেই অভিযানের পর থেকে ক্যাম্পের প্রাণবন্ত পরিবেশ একদম উধাও। অপরিচিত কাউকে দেখলে এড়িয়ে চলছেন সবাই ।
প্রথমেই কথা হল আটকে পড়া পাকিস্তানিদের সংগঠন এসপিজিআরসি'র এক নেতার সাথে। তিনি একেবারে উড়িয়ে দিলেন না ক্যাম্পে মাদক বিক্রির অভিযোগ। বললেন," অভাবে স্বভাব নষ্ট। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমাদের প্রতি বৈষম্য বেড়েছে। অনেক আগে থেকেই আমরা চাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্যে বৈষম্য ও অবহেলার শিকার। হাইকোর্টের এক রায়ের কারণে আমরা ইদানিং ভোট দিতে পারি বটে। কিন্তু  আমরা পাসপোর্ট করতে পারি না, বাসা ভাড়া নিতে পারি না, ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারি না আমাদের মায়ের পরিচয়ে।"
"আগে রমজানে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে সরকারের মাধ্যমে আমাদের জন্য সাহায্য আসত, আমরা তা পেতাম। এখনও আসে, কিন্তু বিগত কয়েক বছর যাবত আমাদের কাছে তা পৌছাচ্ছে না। "
বিভিন্ন চ্যানেলে ক্যাম্পে মাদক সেবনের খবরের ব্যপারে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি জানান," কেউ কেউ এখানে মাদক বিক্রি করে, তবে কোন মাদক সম্রাট এখানে নেই। আর প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ এই ক্যাম্পে আসে। কেউ আসে বিরিয়ানি খেতে , কেউ অন্য মতলবে। সবাইকে কি নজরে রাখা সম্ভব।"
অন্য এক নেতা জানালেন," সারাদেশে এই সমস্যা ছড়িয়ে পড়েছে। শুধু এই ক্যাম্পের সমস্যা  না। এন্ট্রি পয়েন্টে এগুলো আটকালে তো এটি এতো বাড়তে পারতো না। "
"মাদক ব্যবসায়ীরা এই ক্যাম্পের কেউ না, তারা বাইরে থাকে।তাদের হাতেই এ ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ।"
ক্যাম্প ঘুরে বেশ কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা গেল তাদের ঘনিষ্ঠ জনেরা অবিচারের শিকার।
একজন জানালেন যারা ক্যাম্পে সত্যিকার অর্থে মাদক বিক্রি করতেন তারা আগের দিন সন্ধ্যায় ঐ অভিযানের খবর পেয়ে গা ঢাকা দেন। আর নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছিলেন ,"আগামীকাল এই ক্যাম্পে রেড হবে।"
যারা র্যাবের অভিযানে ধরা পড়েছেন তাদের মধ্যে ৩০/৪০জন মাদক বিক্রেতা আর বাকিরা নির্দোষ বলে দাবি করলেন ক্যাম্পবাসি।
হামিদা'র দুই ছেলেকেই ধরে নিয়ে গেছে র্যাব। অনেক কষ্ট নিয়ে বললেন যখন ধরে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন কর্মজীবি দু'ছেলেই ঘুমে। সাঈদ ,৩০,কারচুপি'র কাজ করত আর ইউসুফ,২৫, পেশায় একজন কসাই। দুই ছেলে যে নির্দোষ সেটি বোঝাতে তাদের ঘরে নিয়ে গেলেন সাঈদ-ইউসুফের বৃদ্ধ বাবা। ঘরের একপাশে দেয়ালে হেলানো রয়েছে সাঈদের কারচুপির কাজের টেবিল। বাইরে সিঁড়ির উপর পড়ে আছে ইউসুফের মাংস কাাটবার কাঠের টুকরো আর জংধরা বাটখারা। বেচারা অনেক অনুনয় করলেন যেন বুঝিয়ে লিখি তার ছেলেরা নির্দোষ , তাদের যেন ছেড়ে দেয়া হয়। ছেলেদের অবর্তমানে পরিবারটি বেশ সমস্যায় পড়েছে।
প্রতিবন্ধি মেয়ে সাহানা'র,২৮, দোষ সে র্যাবকে দেখে ভয়ে দৌড় দিয়েছিল। অন্য সবার সাথে তাকেও র্যাবের গাড়িতে তোলা হয়। এখন সে আছে কাশিমপুর কারাগারে। তার চাচা মো: সোবহান জানালেন তার ভাতিজিকে যেন দ্রুত ছেড়ে দেয়া হয়।
৭০ বছরের মোহম্মদ ভুলু একজন মুদি দোকানি। তার হৃদরোগ রয়েছে। তাকে আটক করে ৬ মাসের কেস দিয়ে দেয়া হয়েছে।
ইলেক্ট্রেশিয়ান তাজউদ্দিন, ৩৫, কে আটক করে ৬ মাসের সাজা দেয়া হয়েছে। তার স্ত্রী জানালেন তাকে যখন ধরে নিয়ে যাওয়া হয় তখন বলা হয়েছিল কথা বলে ছেড়ে দিব। আর এখন মামলার কাগজও হাতে পাচ্ছেন না যে আদালত থেকে জামিন নিবেন।
পেশায় রঙমিস্ত্রি মো: আলম,৫৫,  কে ধরে নিয়ে  ২৪৫ পিস ইয়াবা পাওয়া গেছে এমন মামলায়  ফাঁসিয়ে  দেয়ার অভিযোগ করেছে স্বজনেরা।
আর ক্যাম্পে যারা মাদক ব্যবসা করতেন এমন কারো কারো স্বজনেরা অবিচারের অভিযোগ তুলেছেন। যেমন নাদিম ওরফে পঁচিশ ,যিনি গত ১১ জুলাই নারায়ণগঞ্জে এক 'বন্দুকযুদ্ধে' নিহত হন , দু'বছর আগেই এ ব্যবসা ছেড়ে দেন বলে দাবি করেছেন তার স্বজনেরা। মোহম্মদপুর থানায় গিয়ে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে এ ঘোষণা দেন বলে দাবি করেন নাদিমের বোন। আট মাস আগে একটি সংস্থার লোকজন তাকে আটক করে । সেসময় প্রায় একমাস তিনি জেল খাটেন। এরপর গত ১৪ জুন এক দল সাদা পোশাকধারী ব্যক্তি তাকে মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেট ক্যাম্প থেকে তাকে তুলে নিয়ে যায়। তার কোন হদিস নিকটজনেরা এতদিন পাননি। সর্বশেষ 'বন্দুকযুদ্ধে' তিনি মারা যাবার পর তার খোঁজ পান স্বজনেরা।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত বেশ কিছু তথ্যের সাথেও ভিন্নমত প্রকাশ করেন নাদিমের স্বজন ও পড়শিরা। যেমন তারা দাবি করেন তিনি মাদক বিক্রি করতেন এবং 'মাদকসম্রাট' ছিলেন না। ঢাকায় তার কোন জমি বা ফ্ল্যাট ছিল না।
অবশ্য এই দাবিগুলো সেভাবে যাচাই করে করে দেখবার সুযোগ হয়নি সময়, প্রয়োজনীয় যোগাযোগ ও অর্থের অভাবে।
এর বাইরে ক্যাম্পের অন্যান্য পেশাজীবি মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেল প্রকৃত মাদক  বিক্রেতারা খুব কমই ধরা পড়েছেন এই অভিযানে। আর হয়রানি'র শিকার হচ্ছেন নিরীহ মানুষেরা।
সংবাদপত্র আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ঘেঁটে বিগত বেশ কয়েকছরে বিহারি সম্প্রদায়ের উপর দলগত বিদ্বেষের কিছু ঘটনার কথা জানা গেল। ২০১৪ সালের জুন মাসে মিরপুরের কুর্মিটোলা ক্যাম্পে আক্রমণ চালায় একদল বস্তিবাসী। সেসময় আগুনে পুড়ে মারা যায় একই পরিবারের ১০জন বিহারি।
মিরপুর ১১ নম্বর সেকশনে রোড-৪ ব্লক-সি'তে বসবাসরত কিছু বিহারি সম্প্রদায়ের লোককে রাস্তা বড় করার নামে উচ্ছেদের চেষ্টা চালানো হয়। যথাযথ পুনর্বাসনের চেষ্টা না করে তাদের উচ্ছেদের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করে বিহারিরা।
সর্বশেষ বাংলাদেশের ১৩টি জেলার ৭০টি বিহারি ক্যাম্পে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করবার একটি উদ্যোগ নেয়া হয়। গত ৯ মার্চ উচ্চ আদালতে গিয়ে এটি কার্যকর করবার উপর একটি স্থগিতাদেশ নিয়ে আসেন বিহারি সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ।
চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে এই দল-বিদ্বেষ আরো প্রকটভাবে ধরা পড়েছে। যারা নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত,  নানা  অবহেলার শিকার তাদের পক্ষে কিভাবে ক্যাম্পে মাদক ব্যবসা চালিয়ে নেয়া সম্ভব। বাইরের প্রভাবশালী কারও সম্পৃক্ততা এখানে রয়েছ। অথচও তারা রয়ে যাচ্ছে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে,জেলে পচছে নিরীহ মানুষ। এই হতাশার কথা ফুটে উঠল একজনের কথায়," আপনি আমাকে নফরত(ঘৃণা) করেন,  দূরে ঠেলে রাখেন,আর আমি আপনার এলাকায় বসে আপনার ছেলেমেয়েকে নষ্ট করবার কারবার চালিয়ে যাব দিনের পর দিন এমন হিম্মত আমার নাই। দু'একজন যে নাই তা না। কিন্তু তারা খুচরা বিক্রেতা । বড় পাইকার ও ব্যবসায়ীরা তো থাকে ক্যাম্পের বাইরে। তাদের কন্ট্রোলেই সবকিছু। তারা তো বিহারি না। তাদের ধরা হচ্ছে না কেন?"

Sunday, July 8, 2018

একটি দুর্ঘটনা এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা

বাংলাদেশ এভিয়েশন ইতিহাসে সবচেয়ে কালো একটি বছর পার করল। ১১ জুলাই ২০১৭ একটি ইয়াক-১৩০ প্রশিক্ষণ বিমানের দুর্ঘটনা দিয়ে এর সূচনা। ২৭ ডিসেম্বর ২০১৭ তে মহেশখালিতে আরো দু'টি ইয়াকের মুখোমুখি সংঘর্ষে ধ্বংস হয়। কুয়েতি আর্মি চিফকে বহনকারি একটি এমআই-১৭ হেলিকপ্টার সিলেটে ক্র্যাশ ল্যান্ড করে। ইউ এস বাংলা এয়ারলাইন্সের একটি ড্যাশ কিউ ৪০০ এয়ারক্রাফট নেপালের ত্রিভুবন বিমানবন্দরে অবতরণ করতে গিয়ে এ বছরের মার্চের ১২ তারিখ দুর্ঘটনায় পড়েন,যাতে প্রাণ হারান ৫১ জন যাত্রী।
 আর সর্বশেষ গত ১লা জুলাই যশোরে একটি কে৮ডব্লিউ প্রশিক্ষণ বিমান উড়বার কিছু পরেই ধ্বংস হয় যাতে নিহত হন দু'জন পাইলট।
এসব দুর্ঘটনায় একটি ব্যপার লক্ষ্য করবার যত। কমব্যাট পাইলটরা এসব প্লেন চালানোর দায়িত্বে ছিলেন।
সর্বশেষ কে৮ডব্লিউ প্রশিক্ষণ বিমানটি বিধ্বস্ত হবার দিন দশেক আগে চীন সরকারের সাথে অজানাসংখ্যক কে৮ডব্লিউ কেনার ব্যপারে চুক্তি করে বাংলাদেশ সরকার। কোন স্বচ্ছ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে কেবল সরকার আর সরকারের মাঝে এই চুক্তি করা হয়।
সোশ্যাল মিডিয়ায় রটেছে এই দুর্ঘটনার তদন্ত শেষ হবার আগেই আরো একটি কে৮ডব্লিউ প্রশিক্ষণ বিমানের জন্য অর্ডার করেছে বাংলাদেশ হারানো বিমানটির স্থান পূরণের জন্য। অথচ পুরো তদন্ত প্রক্রিয়া শেষ হলে অর্ডারটি দেয়া যেত।
এত বেশি প্রশিক্ষণ বিমানেরঅর্ডার দেবার পেছনে দু'টি কারণ কাজ করছে বলে আমার ধারণা: এক, চতুর্থ প্রজন্মের বিমান চালনার উপযোগি বৈমানিক তৈরি; দুই, কোন বন্ধু রাষ্ট্রের জরুরি প্রয়োজনে সাড়া দিয়ে বৈমানিক প্রেরণ।
একটি অপ্রিয় সত্য কথা হল ২০১৪, ২০১৫ সালেও এই বিমান দুর্ঘটনার প্রকোপ ছিল । কিন্তু এক বছরে এটি সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।
অজানা কারণে আমাদের গণমাধ্যম প্রতিরক্ষা খাত নিয়ে খুব একটা সংবাদ পরিবেশন করতে চাননা।তাই এ খাত নিয়ে যেকোন সংবাদের প্রাথমিক উৎস হচ্ছে আইএসপিআর, যেটি আবা সেনাসদর পরিচালিত।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ইতিমধ্যে চাউর হয়েছে যে একটি প্রভাবশালী বন্ধুরাষ্ট্রের সাথে দ্বিপক্ষীয় নিরাপত্তা চুক্তি করেছে। সদ্য বিদায়ী সেনাপতি সেদেশ সফরের সময় কাজটি করেছেন। অথচ মূলধারার গণমাধ্যমে এটি নিয়ে কোন আলোচনা ও প্রশ্ন করবার সুযোগ দেয়া হয়নি।
বাংলাদেশ এরই মধ্যে বেশ বড় ধরণের প্রতিরক্ষা ক্রয় প্রক্রিয়া শুরু করেছে। প্রতিরক্ষা খাত একটি 'স্পর্শকাতর'  খাত এই দোহাই দিয়ে এ খাত নিয়ে সংবাদ পরিবেশন নিয়ে গণ-মাধ্যমকে দূরে রাখা হয়েছে।
অথচ রাষ্ট্রের করের টাকা সবচেয়ে বেশি খরচ হয় যেসব খাতে তার একটি হচ্ছে প্রতিরক্ষা খাত। পৃথিবীজুড়ে এটি স্বীকৃত যে প্রতিরক্ষা খাত হচ্ছে দুর্নীতির আখড়া। কাজেই জনগণের অবশ্যই অধিকার আছে তাদের করের টাকা এখাতে কিভাবে খরচ হচ্ছে সেটি জানার। নানা জুজু'র ভয় দেখিয়ে এখাত নিয়ে সংবাদ পরিবেশন বাধাগ্রস্ত করাটা কতটা যুক্তিসংগত সেটি ভেবে দেখবার সময় এসেছে।
একটি ব্যাপার এখানে লক্ষ্যণীয় যে দুর্ঘটনার শিকার সব এয়ারক্র্যাফটই সরকারি চুক্তিতে কেনা অথবা ঋণের  টাকায় কেনা। কোন রকম স্বচ্ছ ক্রয় প্রক্রিয়া অনুসরণ না করবার কারণে এসব পণ্যের গুণগত মান, রক্ষণাবেক্ষন মান নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। আবার জবাবদিহি না থাকাটাও একটি কারণ।
আবার গণমাধ্যম এখাত নিয়ে সেভাবে সরব না হওয়ায় এখাতের দুর্নীতি সেভাবে উঠে আসছে না। এই অস্ত্র বিক্রির কমিশন কাদের পকেটে যাচ্ছে সেটিও পরিষ্কার নয়।
ক্ষমতার অপব্যবহারও এ খাতে ব্যপক আকারে ঘটে থাকে। উদাহরণ হিসেবে টানা যায় নজরদারি যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে ২০১৫ সালে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচনকে প্রভাবিত করবার চেষ্টা ।
কক্সবাজারের পৌর কাউন্সিলর ও আওয়ামি লীগ নেতা একরামের 'বন্দুকযুদ্ধে'  মৃত্যুর অডিও ভাইরাল হবার  পর আশা করা হয়েছিল ক্ষমতাসীন দলটি হয়ত এখাতে নানা অনিয়ম, অন্যায় ও অনাচারের ব্যপারে একটু সক্রিয় হবে। সেটি হয়নি । র্যাবের ভেতর কোন পরিবর্তন আনা হয়নি। সামরিক কেনাকাটা আরো বেড়েছে।
অথচ পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে বোফর্স কামান ক্রয়  কেলেঙ্কারির জেরে কঙ্গ্রেস পার্টিকে নির্বাচনে হারতে হয়েছিল। আর এই কেলেঙ্কারির খবর ফাঁস করেছিল গণমাধ্যম।
আরেকটি ব্যপার হল প্রতিরক্ষা ব্যয়ের ছিটেফোঁটাও বেসরকারি খাত সেভাবে পাচ্ছে না। ইদানিং সোশ্যাল মিডিয়াতে কানাঘুষা উঠেছে যে কিছু কিছু বড় গ্রুপ এ খাতে প্রবেশে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।  কিন্তু আমাদের প্রচলিত আইন , যেটি বেসরকারি উদ্যোক্তাদের এখাতে যুক্ত হতে নিরুৎসাহিত করে, এখানে বাঁধা। আবার সরকারী নানা প্রতিষ্ঠান যারা প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ও অস্ত্র উৎপাদনের সাথে জড়িত তাদের পুঁজিবাজারে আনতে হবে। তাই প্রয়োজনে বিদ্যমান আইন সংস্কার করতে হবে অথবা নতুন আইন পাশ করাতে হবে। আর চলমান অস্ত্র ক্রয়ের কমিশনের একটি অংশ যেন  বিজ্ঞান গবেষণা , বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান গবেষণাগার নির্মাণ/উন্নত করা, প্রকৌশল  বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণাগার নির্মাণ, চিকিৎসা গবেষণা, মেডিক্যাল ইকু্ইপমেন্ট নির্মাণে গবেষণা ইত্যাদি খাতে ব্যয় করা হয় সেদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। এসব অত্যন্ত ব্যয়বহুল কাজ। সরকারের ইচ্ছা ও সাধ্যের ঘাটতি আছে। আমাদের দেশের বেসরকারি খাতও এতটা বিকশিত নয় যে তারা এসব মহৎ উদ্যোগের সাথে সম্পৃক্ত হবে এবং বাজারকে কাজে লাগিয়ে গবেষণার ফলকে ব্যবহার করবে। কাজেই সরকারকে বিজ্ঞান গবেষণার অবকাঠামো গড়ে তুলতে হবে। মানুষের এবং শিল্পের প্রয়োজন এমন গবেষণা প্রকল্প বাছাই করতে হবে। আর এজন্য আজেবাজে লোকের পকেটে এসব কমিশনের টাকা যাবার চেয়ে বিজ্ঞান গবেষণায় খরচ করা ঢের ভাল। দরকার হলে প্রয়োজনীয় আইন করতে হবে এটি নিশ্চিত করবার জন্য।




মোদ্দা কথা হল, প্রতিরক্ষা খাতে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হলে এখাত নিয়ে সংবাদ প্রকাশে গণমাধ্যমকে আরো স্বাধীনতা দিতে হবে এবং বেসরকারি খাতকে এখানে সম্পৃক্ত করতে হবে। সংবাদ মাধ্যম যদি ২০১৪ সালের ক্র্যাশের ঘটনাগুলো সেভাবে প্রচার করতো এবং তদন্ত সঠিক হল কিনা, কিংবা  প্রতিরক্ষা অনিয়মের ব্যপারে নিয়মিত প্রতিবেদন দিত তাহলে হয়ত যশোরের অথবা ইউ এস বাংলার ঘটনা ঘটত না। আর বিকল্প গণমাধ্যমের এই যুগে প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত সংবাদতো চাপা দেয়া যাচ্ছে না। যেমন শীর্ষ সেনাপতিদের জন্য টেন্ডার ছাড়াই বিলাসবহুল বিএমডব্লিউ সিরিজ৭/লেক্সাস ভি৮ কেনার একটি প্রক্রিয়া,একবার বাতিল করা হয়েছিল আবার সক্রিয় করা হয়েছে, সংক্রান্ত খবর সোশ্যাল মিডিয়াতে এসে গেছে। বিকল্প গণমাধ্যম পারলে মূল ধারার গণমাধ্যম এসব খবর প্রকাশ করতে ও প্রশ্ন করতে পারবে না কেন? আর এসব খবর প্রকাশ করলে কেন একজন সাংবাদিকের রুটি-রুজি হুমকিতে পড়বে আর কেনইবা সংবাদ মাধ্যমের মালিককে ব্যবসায়িক হুমকি ও হয়রানির মুখে পড়তে হবে?সরকারের দৃষ্টিভঙ্গির আশু পরিবর্তন জরুরি।


[ছবির ক্রেডিট: বিডিমিলিটারিওয়ানের ফেসবুক পেজ]                     

Wednesday, June 20, 2018

লাপাত্তা সমীকরণ

সরকার বাহাদুর পণ করেছেন দেশ থেকে মাদক দূর করে ছাড়বেন। মাদকবিরোধী অভিযান ভবিষ্যতে আরো জোরালো হবে এমনটি বলা হচ্ছে বিভিন্ন মহল থেকে ।
এরই মধ্যে সংবাদপত্রের খবরে বলা হয়েছে মিরপুরের একটি বস্তি থেকেই মাসে ৫০ কোটি টাকার মাদক বিক্রি হত। তবে এই অনর্থের যে অনেক শরিক ছিলেন সেটি নির্দ্বিধায় বলা যায়।মাদক বিক্রেতা,যাকে বলা হচছে 'মাদক সম্রাট', যে পরিণতি বরণ করবার কথা তা বরণ করেছেন।
দেশজুড়ে মাদকের যে এত ব্যাপক বিস্তার তাতে কি সরকারের কোন দায় নেই? কোন গোত্রে না থাকার সুবিধা নিয়ে খোলামেলাভাবে এই দিকটার দিকেই একটু জোর দিতে চাই।মাদক-ব্যবসা আর ক্যাডার-নির্ভর রাজনৈতিক সংস্কৃতির যোগটা এই তথাকথিত অভিযানে একেবারেই উপেক্ষিত।
অন্য যেকোন সময়ের চেয়ে আমাদের দেশে ক্যাডার-নির্ভর রাজনৈতিক দলের সংখ্যা অনেক বেশি। কারণ আমাদের দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ এদের বিকাশে  বেশ সহায়ক ভূমিকা পালন করে। প্রথমে একটু খোলাসা করা দরকার এই ক্যাডার-নির্ভর রাজনৈতিক দল বলতে বোঝানো হচ্ছে যেসব দলের কর্মীদের প্রধান কাজ হচ্ছে গোত্রস্বার্থ রক্ষা করা যেকোন মূল্যে। রাজনীতি তাদের প্রধানতম পেশা। গোত্রগুলোও এজন্য তাদের ক্যাডারদের স্বার্থ রক্ষা করেন। এসব ক্যাডার দ্বিতীয় পেশা হিসেবে কোথাও কাজ করেন বা ব্যবসা করেন । কিন্তু তাদের প্রধানতম পেশা রাজনীতি। গোত্রগুলো প্রয়োজনমতো তাদের 'পুষ্টি'(মাসোহারা) সরবরাহ করে আর তাদের স্বার্থ সংরক্ষণ করে।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ক্যাডার-নির্ভর দল হল আওয়ামী লীগ । এরপর জামা'তে ইসলামি। কম্যুনিস্ট পার্টি একেবারে পাঠ্য বইয়ের মত এই ক্যাডার-সংস্কৃতি লালন করে। অন্যান্য বামদলগুলোও একই সংস্কৃতির ধারক। বিএনপিও এই পথেই হেঁটেছে গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে উত্তরণের পর থেকে।
জামা'তের হাত ধরেই এদেশে পুরো দস্তুর ক্যাডার-সংস্কৃতি চালু হয়েছিল। দল করলে চাকরি-ব্যবসা পাওয়া যায়, নানা সুবিধা পাওয়া যায়-এমন ধারণা দলটি রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করছে। অন্য দলগুলো পরর্তীতে তাদের অনুসরণ করেছে।
অনিবার্য ফল হচ্ছে আমাদের সমাজ থেকে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য- বোধ, পেশাদারিত্ব, দ্বি-মত হবার অধিকার, না-বলবার অধিকার --এগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোর বারোটা বাজছে, আর আমাদের ব্যবসাগুলো প্রতিকূল সময়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে পারছে না।
ক্যাডার-নির্ভর দলগুলো পরিচালনার অনেক খরচ। এর প্রয়োজন মেটাতেই দরকার পরে ধূসর উৎসের। ধূসর উৎস বলতে বোঝানো হচ্ছে এমন সব উৎসকে যেখানে লেনদেন ও টাকা-পয়সার হিসেবের কোন রেকর্ড আর হদিস রাখা হয় না।
মাদক ব্যবসা এরকমই একটি ধূসর উৎস। বিগত বছরগুলোতে রাজনৈতিক মদদ আর আইন-শৃঙখলা রক্ষাকারি বাহিনির পৃষ্ঠপোষকতায় এর বেশ বিস্তার ঘটেছে।
খবরে প্রকাশ, ফি বছর ঢাকার ফুটপাথগুলো থেকে ১৩০০ কোটি টাকার চাঁদা তোলা হয়। আর ইয়বার বার্ষিক ব্যবসার পরিমাণ ৬০০০ কোটি টাকা। কম-করে-ধরা সংখ্যা'র উপর এই হিসেব বের করা হয়েছে। প্রকৃত লেনদেনের হিসেব আরো বেশি বলেই অনেকের শঙ্কা।
দেশব্যাপি ধূসর উৎসের যে বিস্তার ঘটেছে তার অবশ্যই সুবিধাভোগী জনগোষ্ঠি রয়েছে। এরা কারা? এদের চিহ্নিত করবার কোন পদক্ষেপ কি নেয়া হয়েছে?
এটা ভাবা খুবই বোকামির হবে যে কোটিপতি মাদক-বিক্রেতার মৃত্যুর সাথে সাথে বিশাল মাদক সাম্রাজ্যের পতন ঘটবে। কেননা সমাজে আর রাজনীতিতে এ ধরণের উৎস টিকিয়ে রাখার প্রয়োজনটা রয়ে গেছে। কাজেই নিচু-তলার মাদক বিক্রেতাদের হত্যার মাধ্যমেমাদক নির্মূলের প্রয়াস অনেকটা দূরারোগ্য ব্যাধির উপসর্গ চিকিৎসা করবার মত।
ক্যাডার-নির্ভর রাজনৈতিক সংস্কৃতি নানাভাবে এই ধূসর অর্থ খরচ করে। এছাড়া এই অর্থ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়নেও ভূমিকা রাখছে। যার জন্য মাদকের এই ভয়াবহ বিস্তার। সবচেয়ে মজার ব্যপার যেখানে আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর স্থাপনা ও সদস্য সংখ্যা বেশি, সেখানেই মাদকের বিস্তার ঘটেছে বেশি।ভারতেরও মিয়ানমারের সাথে বিশাল অরক্ষিত সীমান্ত রয়েছে। সেখানে মেগাসিটি'র সংখ্যা, প্রাতিষ্ঠানিক খাত ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের মজুরি বাংলাদেশের চেয়ে বেশি। অথচ সেখানে বাংলাদেশের মত ইয়াবার আগ্রাসন হয়নি। ভারতে বাংলাদেশের মত ক্যাডারনির্ভর সংস্কৃতি এত অসহনীয় পর্যায়ে যায়নি।  সেদেশের গণতন্ত্রে ব্যক্তি স্বাধীনতা, দ্বি-মত হবার অধিকারের মত ব্যাপারগুলো রয়েছে।
মোদ্দা কথা হল,আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর রক্ষাকবচ ও সহযোগিতা ছাড়া সারাদেশে মাদকের বিষ ছড়িয়ে পড়তে পারত না। সচেতন আম-আদমি জানতে চায় যেসব আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা নিয়মিত মাদকের আখরা থেকে টাকা নিতেন তাদের ক'জনকে নিহত মাদক বিক্রেতাদের ভাগ্য বরণ করতে হয়েছে।
আর গোত্র অনুসারীদের 'পুষ্টি' যোগান দেয়ার যে বিস্তৃত নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে তাতে আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোর খবর হয়ে যাচ্ছে। বাজারের নিয়ম এখানে খাটছে না। খরচ বাড়ছে উন্নয়ন প্রকল্পের। আমাদের কোন প্রতিষ্ঠানই লম্বা সময়ের জন্য টিকে থাকতে পারছে না।
'বন্দুকযুদ্ধে' যেসব মাদক-বিক্রেতা মারা পড়ছেন তাদের সামনে জীবিকা বেছে নেওয়ার খুব কম বিকল্পই সামনে ছিল। উন্নত ও মর্যাদাকর জীবিকা তৈরির দায়িত্ব রাজনীতিবিদদের বিভিন্ন নীতি গ্রহন ও প্রয়োগের মাধ্যমে। অথচ প্রতিপক্ষকে কোনঠাসা করতে গিয়ে তারা গড়ে তুলেছেন ক্যাডার নির্ভর  গোত্র সংস্কৃতি। আমরা, আম-আদমি যারা, বেদনার সাথে লক্ষ্য করছি চলমান মাদক বিরোধী যুদ্ধ পরিচালনাকারীদের বিবেচনা থেকে এই সমীকরণটি একেবারে লাপাত্তা হয়ে গেছে।

Tuesday, June 12, 2018

প্রয়োজন বিদেশি উপদেষ্টার

অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাবিত বাজেটের পর সংসদের ভেতরে ও বাইরে তাকে নিয়ে তীব্র সমালোচনা চলছে। আর্থিক খাত কেলেঙ্কারির পুরো দায় সবাই তাঁর উপরই চাপাতে চায়। সর্বশেষ ব্যাংকগুলোর উপর কর-কমানোর প্রহস্তাবগুলোও অনেকেই ভালো চোখে দেখেনি। এ লেখার উদ্দেশ্য তাঁর ও তাঁর বাজেটের সমালোচনা নয়, বরং ভবিষ্যতে অর্থমন্ত্রী, উপদেষ্টা ও বিভিন্ন ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে আমরা কি ধরণের লোক দেখতে চাই সেবিষয়ে আমার পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা ।
ভবিষ্যতে যে সরকারই আসুক আমার মনে হয় না বিগত  বছরগুলোতে আর্থিক খাতে যে সুনামি বয়ে গেছে তাতে কোন পেশাদার আর মেরুদন্ডওয়ালা লোকজন এসব পদে বসতে চাইবেন। কেউই চাইবেননা রাজনৈতিক দলগুলো তাঁর ঘাড়ে বন্দুক রেখে  শিকার করুক।
সমাধান হচ্ছে এসব পদের জন্য বিদেশি খোঁজা, বাংলাদেশি দ্বৈত নাগরিক নয়। আইনে কি আছে জানি না, তবে আইন বাঁধা হয়ে দাড়ালে মন্ত্রী ছাড়া অন্য পদগুলোর জন্য পেশাদার বিদেশিদের খুব দরকার। তাঁরা সরকারের লক্ষ্যের ফর্দ নিয়ে কর্মপরিকল্পনা তৈরি করবেন , সেভাবে তাঁদের দল গঠন করবেন আর লক্ষ্য পূরণে কাজ করে যাবেন।
বছরখানেক আগে  আমি বিভিন্ন পেশায় বিদেশিদের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে একটি লেখা লিখেছিলাম। আমাদের দেশে গোত্রীয় রাজনীতির কারণে দেশীয় পেশাজীবিদের ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক সরকারের সময়ে সেভাবে স্বচ্ছন্দ ও তৃপ্তি নিয়ে কাজ করতে পারেন না।
নিজ গোত্রের সরকারের সময় একজন পেশাজীবি তাঁর কর্মক্ষেত্রে যে স্বচ্ছন্দ ও তৃপ্তি(ইউিটিলিটি) পান, ভিন্ন গোত্রের সময়ে সেটি পাননা। অনেক সময় তাকে নানা ধরনের প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হয়।
একজন বিদেশির সেসব ঝামেলা নেই। তিনি সব গোত্রের সরকারের সময়ে একই স্বচ্ছন্দ ও তৃপ্তি নিয়ে কাজ করেন। ফলে নির্ধারিত লক্ষ্য পূরণে তাঁর কাজ করে যাওয়াটা বেশ সহজ।
এর বাইরে আমাদের দেশের "আমরা-আমরাইতো"  সংস্কৃতি  পেশাজীবিদের উৎকর্ষতা অর্জনের ক্ষেত্রে অন্তরায়। বিদেশিদের নিয়োগ এটি আমূল বদলে দেবে বলে আমার ধারণা।
আর আমাদের দেশে ভিন্ন গোত্রের পেশাজীবিদের অন্ন গোত্রের লোক ও বিভিন্ন এজেন্সির মাধ্যমে চোখ-রাঙানি , হয়রানি ও ব্ল্যাকমেইলিং এর শিকার হতে হয়। বিদেশিদের নিয়োগের ফলে এর প্রকোপ হয়ত কিছুটা কমবে।
অনেক সময় দেখা যায় গোত্র সরকারগুলোতে এধরনের উঁচু পদের লোকজনের দ্বিমত হবার সুযোগ খুব কম। ফলে তাঁদের অনিচ্ছা সত্ত্বেও অনেক অপ্রিয় কাজে সায়, যা অনেক ক্ষেত্রেই অনৈতিক, দিতে হয় অথবা একেবারে সরকারের শেষ সময় পর্যন্ত রয়ে যেতে হয়।
বিদেশিদের আত্মমর্যাদা একটু বেশি হওয়ায় তাঁরা অন্যায় আব্দারের কাছে মাথানত না করে বরং পদত্যাগ করে চলে যাবেন। আর খুব বেশি অসুবিধায় পড়লে সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাস তাঁদের পাশে দাড়াবে। কাজেই আমাদের গোত্রদ্বন্দ্বে-নাকাল দেশে ও দুর্নীতিতে জর্জরিত সমাজে তাঁরা বেশ ভালভাবেই লক্ষ্যপূরণে কাজ করে যেতে পারবেন।
অনেকেই দেশপ্রেমের দোহাই দিবেন। তথাকথিত দেশপ্রেমিক পেশাজীবিদের দৌরাত্ম্য -এ দেশের অর্থনীতির যে বারোটা বেজেছে সেটিতো আর নতুন করে বলতে হবে না। আর দু'টি খাতে বিদেশিদের অবদান কিন্তু স্বীকার করতেই হবে। একটি হল ক্রিকেট , অন্যটি তৈরি পোশাক খাত। অন্যান্য খাতেও তাঁদের অবদান বিস্তৃত করা যায়। আর মধ্যপ্রাচ্যের বহুদেশে  এ ধরণের পদগুলো অলঙ্কৃত করছেন বিদেশিরা।
বাংলাদেশ সরকারের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা বা বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর  পদ নিতে ক'জন বিদেশি রাজি হবেন সেটিও দেখার বিষয়। তবে বাংলাদেশ তো মোটামুটিভাবে সফল কোন মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি'র চেয়ে কম নয়। চাইলেই অনেককে এ ধরণের পদের জন্য অনেককে পাওয়া যাবে।
আমার নিজস্ব অভিমত হচ্ছে বিদেশি কোন সরকারের/প্রাদেশিক সরকারের উপদেষ্টা, বহুজাতিক কোম্পানির সাবেক প্রধান নির্বাহি বা নিরীক্ষা বিভাগের প্রধান, মার্চেন্ট ব্যাংকার, চার্টার্ড একাউন্ট্যান্ট,বিনিয়োগ /কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ এধরণের লোকজন।
ভাল হয় ইউরোপিয়ান/আফ্রিকান যাঁর মধ্যপ্রাচ্য বা আফ্রিকার দেশগুলোতে কাজ করবার অভিজ্ঞতা রয়েছে। পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে চাইলেই এধরণের বহু পেশাজীবি পাওয়া যাবে। এসব দেশের সরকার আর রাজনীতির বিবর্তন অনেকটা উপমহাদেশের মতই। এছাড়া ক্রোনি ক্যাপিটালিজম আর দুর্নীতির সাথে কাজ করবার অভিজ্ঞতাও এঁদের আছে। লম্বা সময়ের জন্য তাঁরা এখানে কাজ করবেন কিনা সেটি একটি প্রশ্ন।
একটা প্রশ্ন উঠতে পারে বিপুল অর্থ ব্যয়ে তাঁদের নিয়োগ নিয়ে। এখানে যেটি বিবেচনায় নিতে হবে সেটি হল পেশাদারিত্ব আর স্বাধীনভাবে কাজ করবার সক্ষমতা।আমাদের দেশের পেশাজীবি গোষ্ঠি, নিরপেক্ষ হলেও, দেশের কদর্য গোষ্ঠিতন্ত্রের কারণে সেটি পারেন না। নানাভাবে তাঁদেরকে ভয় আর হয়রানির মাধ্যমে কোনঠাসা করে রাখা হয়।  সেনানির্ভর একটি গোষ্ঠি প্রচলিত অবস্থার খুব একটা পরিবর্তন চায় না রাজনীতির উপর তাদের কব্জা বজায় রাখার জন্য। ফলে হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে। আর গোষ্ঠিবাজরা দেশপ্রেমের ধুয়ো তুলে ভবিষ্যতের আবাস করছেন বিদেশে।
বিদেশিরা এসব নানা ধরণের প্রভাববলয় থেকে অনেকটাই মুক্ত। ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোন কারণও তাঁদের নেই। তাঁদের সুশাসনের কারণে অবস্থার যে উন্নতি ঘটবে সেটিকে বিবেচনায় নিয়ে তাঁদের নিয়োগকে দেখতে হবে। আর ইউটিলিটি তত্ত্ব প্রয়োগ করে আমরা দেখলাম যে এ ধরণের পদক্ষেপের যথেষ্ট যৌক্তিক ভিত্তি রয়ে গিয়েছে।

Sunday, June 3, 2018

মন্দা ঈদ বাজার


ঈদ বাজার বেশ মন্দা যাচ্ছে বলেই মনে হচ্ছে এ বছর। তারপরও পুরো রোজা শেষ হলে বোঝা যাবে বেচা-কেনা ঠিক কিরকম ছিল। ঈদের শেষ ক'দিন আর চাঁদ রাতে বেচা-কেনা সব অনুমানকে হার মানায়।



আমার এরকমটা মনে হবার কারণ অমূলক নয়। পেছনে রয়েছে বেশ কিছু কারণ।



১. রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা আর নির্বাচনের বছরের জন্য একটি গোষ্ঠি সেভাবে ব্যবসার ময়দানে সরব নয়। ঈদ বাজারে তাদের লগ্নি সেভাবে নেই। তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত রাজনীতি সংশ্লিষ্ট এই গোষ্ঠির টাকা বাজারে সেভাবে খাটবে না।



২. বর্ষার কারণে আর চলমান মাদক-বিরোধী হত্যাকান্ডের কারণে ফুটপাথের বাজার, যেখানে রাজনৈতিক দলের কব্জায় সবকিছু, সেভাবে জমে উঠেনি। এছাড়া চলমান উন্নয়নমূলক বেশ কিছু কাজের জন্য ঢাকার বেশ কিছু জায়গায় ফুটপাথে সেভাবে কোন বাজার বসতে পারেনি, এখন পর্যন্ত।



৩. বেশ কিছু বাজারে ক্রেতা খরা চলছে। একটি প্রতিবেদন অনুসারে মিরপুর বেনারসি পল্লি এ ভরা মৌসুমে এবছর সবচেয়ে কম ক্রেতা সমাগম হয়েছে এখন পর্যন্ত। বড় বড় সুপার মার্কেটগুলোর ক্রেতা আকর্ষণে সেভাবে কোন বিশেষ অফার বা ছাড় নজরে পড়েনি। প্রচার মাধ্যমগুলোতেও সেরকম কোন বিজ্ঞাপন এখন পর্যন্ত নজরে আসছে না।



৪. বিভিন্ন ধরণের ব্র্যান্ডগুলোও কিন্তু সেভাবে ঈদ নিয়ে এ বছর এখন পর্যন্ত বিশেষ প্রচারণা চালায়নি । যেমন মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোর বিশেষ অফার নিয়ে বিজ্ঞাপন এখন পর্যন্ত নেই। এদের কাছ থেকেই গণমাধ্যমগুলো এসময় বেশ বিজ্ঞাপন পেয়ে থাকে। এবছর সেটিরও কিছুটা ব্যত্যয় ঘটেছে বলেই মনে হচ্ছ।



৫. রোজার শুরুতেই বেশ কিছু মার্কেটে কাস্টম্স ও পুলিশের অবৈধ পণ্যের বিরুদ্ধে তথাকথিত অভিযান ব্যবসায়ীদের কিছুটা সন্ত্রস্ত করেছে। অনেক জায়গায়ই তারা দোকানিদের প্রতিরোধের মুখে পড়েন। কেউ কেউ অভিযোগ করছেন ব্যবসায়ীদের হয়রানি করতেই এই অভিযান। নয়ত তারা এভাবে প্রতিরোধের মুখে পড়তেন না। আর অভিযানের জন্য এই সময়টাকে বেছে নেওয়াকেও অনেকে ভাল চোখে দেখছেন না। কেউ কেউ টিপ্পনি কাটছেন কেরানিদের বখরার খরা কাটাতেই কিনা এই অভিযান।


[৬. কেরানিগঞ্জের পোশাকের পাইকারি বাজারে কিছুটা প্রাণ এলেও বিগত বছরের মন্দাভাব এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি। এখান থেকেই সারা দেশের মার্কেটগুলোতে পোশাক যোগান দেয়া হয়। বেশ কয়েক বছর ধরে কেরানিগঞ্জের পোশাকের বাজার চিনা সস্তা পোশাকের দখলে।


৭.প্রতিবেশি কিছু দেশে যাতায়াত বেশ সহজ হয়ে যাওয়ায় ধনী মধ্যবিত্তের বড় অংশ ঈদের আগে সেসব দেশ থেকেই কেনাকাটা সারেন। সম্প্রতি এ প্রবণতা আরো বেড়েছে।]





ঈদ শেষেই বলা যাবে হলফ করে কেমন গেল এ বছরের ঈদ বাজার। তবে বড় বড় ব্র্যান্ড আর নিচু তলার ব্যবসায়ীদের বাজার জ্ঞান বেশ টনটনে। বাজারো তাদের আচরণ দেখে বোঝা যায় ঈদ বাজার ভাল যাচ্ছে না।

যাত্রা হলো শুরু


আমার বাঙলা ব্লগে আপনাকে স্বাগতম।