Wednesday, June 20, 2018

লাপাত্তা সমীকরণ

সরকার বাহাদুর পণ করেছেন দেশ থেকে মাদক দূর করে ছাড়বেন। মাদকবিরোধী অভিযান ভবিষ্যতে আরো জোরালো হবে এমনটি বলা হচ্ছে বিভিন্ন মহল থেকে ।
এরই মধ্যে সংবাদপত্রের খবরে বলা হয়েছে মিরপুরের একটি বস্তি থেকেই মাসে ৫০ কোটি টাকার মাদক বিক্রি হত। তবে এই অনর্থের যে অনেক শরিক ছিলেন সেটি নির্দ্বিধায় বলা যায়।মাদক বিক্রেতা,যাকে বলা হচছে 'মাদক সম্রাট', যে পরিণতি বরণ করবার কথা তা বরণ করেছেন।
দেশজুড়ে মাদকের যে এত ব্যাপক বিস্তার তাতে কি সরকারের কোন দায় নেই? কোন গোত্রে না থাকার সুবিধা নিয়ে খোলামেলাভাবে এই দিকটার দিকেই একটু জোর দিতে চাই।মাদক-ব্যবসা আর ক্যাডার-নির্ভর রাজনৈতিক সংস্কৃতির যোগটা এই তথাকথিত অভিযানে একেবারেই উপেক্ষিত।
অন্য যেকোন সময়ের চেয়ে আমাদের দেশে ক্যাডার-নির্ভর রাজনৈতিক দলের সংখ্যা অনেক বেশি। কারণ আমাদের দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ এদের বিকাশে  বেশ সহায়ক ভূমিকা পালন করে। প্রথমে একটু খোলাসা করা দরকার এই ক্যাডার-নির্ভর রাজনৈতিক দল বলতে বোঝানো হচ্ছে যেসব দলের কর্মীদের প্রধান কাজ হচ্ছে গোত্রস্বার্থ রক্ষা করা যেকোন মূল্যে। রাজনীতি তাদের প্রধানতম পেশা। গোত্রগুলোও এজন্য তাদের ক্যাডারদের স্বার্থ রক্ষা করেন। এসব ক্যাডার দ্বিতীয় পেশা হিসেবে কোথাও কাজ করেন বা ব্যবসা করেন । কিন্তু তাদের প্রধানতম পেশা রাজনীতি। গোত্রগুলো প্রয়োজনমতো তাদের 'পুষ্টি'(মাসোহারা) সরবরাহ করে আর তাদের স্বার্থ সংরক্ষণ করে।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ক্যাডার-নির্ভর দল হল আওয়ামী লীগ । এরপর জামা'তে ইসলামি। কম্যুনিস্ট পার্টি একেবারে পাঠ্য বইয়ের মত এই ক্যাডার-সংস্কৃতি লালন করে। অন্যান্য বামদলগুলোও একই সংস্কৃতির ধারক। বিএনপিও এই পথেই হেঁটেছে গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে উত্তরণের পর থেকে।
জামা'তের হাত ধরেই এদেশে পুরো দস্তুর ক্যাডার-সংস্কৃতি চালু হয়েছিল। দল করলে চাকরি-ব্যবসা পাওয়া যায়, নানা সুবিধা পাওয়া যায়-এমন ধারণা দলটি রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করছে। অন্য দলগুলো পরর্তীতে তাদের অনুসরণ করেছে।
অনিবার্য ফল হচ্ছে আমাদের সমাজ থেকে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য- বোধ, পেশাদারিত্ব, দ্বি-মত হবার অধিকার, না-বলবার অধিকার --এগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোর বারোটা বাজছে, আর আমাদের ব্যবসাগুলো প্রতিকূল সময়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে পারছে না।
ক্যাডার-নির্ভর দলগুলো পরিচালনার অনেক খরচ। এর প্রয়োজন মেটাতেই দরকার পরে ধূসর উৎসের। ধূসর উৎস বলতে বোঝানো হচ্ছে এমন সব উৎসকে যেখানে লেনদেন ও টাকা-পয়সার হিসেবের কোন রেকর্ড আর হদিস রাখা হয় না।
মাদক ব্যবসা এরকমই একটি ধূসর উৎস। বিগত বছরগুলোতে রাজনৈতিক মদদ আর আইন-শৃঙখলা রক্ষাকারি বাহিনির পৃষ্ঠপোষকতায় এর বেশ বিস্তার ঘটেছে।
খবরে প্রকাশ, ফি বছর ঢাকার ফুটপাথগুলো থেকে ১৩০০ কোটি টাকার চাঁদা তোলা হয়। আর ইয়বার বার্ষিক ব্যবসার পরিমাণ ৬০০০ কোটি টাকা। কম-করে-ধরা সংখ্যা'র উপর এই হিসেব বের করা হয়েছে। প্রকৃত লেনদেনের হিসেব আরো বেশি বলেই অনেকের শঙ্কা।
দেশব্যাপি ধূসর উৎসের যে বিস্তার ঘটেছে তার অবশ্যই সুবিধাভোগী জনগোষ্ঠি রয়েছে। এরা কারা? এদের চিহ্নিত করবার কোন পদক্ষেপ কি নেয়া হয়েছে?
এটা ভাবা খুবই বোকামির হবে যে কোটিপতি মাদক-বিক্রেতার মৃত্যুর সাথে সাথে বিশাল মাদক সাম্রাজ্যের পতন ঘটবে। কেননা সমাজে আর রাজনীতিতে এ ধরণের উৎস টিকিয়ে রাখার প্রয়োজনটা রয়ে গেছে। কাজেই নিচু-তলার মাদক বিক্রেতাদের হত্যার মাধ্যমেমাদক নির্মূলের প্রয়াস অনেকটা দূরারোগ্য ব্যাধির উপসর্গ চিকিৎসা করবার মত।
ক্যাডার-নির্ভর রাজনৈতিক সংস্কৃতি নানাভাবে এই ধূসর অর্থ খরচ করে। এছাড়া এই অর্থ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়নেও ভূমিকা রাখছে। যার জন্য মাদকের এই ভয়াবহ বিস্তার। সবচেয়ে মজার ব্যপার যেখানে আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর স্থাপনা ও সদস্য সংখ্যা বেশি, সেখানেই মাদকের বিস্তার ঘটেছে বেশি।ভারতেরও মিয়ানমারের সাথে বিশাল অরক্ষিত সীমান্ত রয়েছে। সেখানে মেগাসিটি'র সংখ্যা, প্রাতিষ্ঠানিক খাত ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের মজুরি বাংলাদেশের চেয়ে বেশি। অথচ সেখানে বাংলাদেশের মত ইয়াবার আগ্রাসন হয়নি। ভারতে বাংলাদেশের মত ক্যাডারনির্ভর সংস্কৃতি এত অসহনীয় পর্যায়ে যায়নি।  সেদেশের গণতন্ত্রে ব্যক্তি স্বাধীনতা, দ্বি-মত হবার অধিকারের মত ব্যাপারগুলো রয়েছে।
মোদ্দা কথা হল,আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর রক্ষাকবচ ও সহযোগিতা ছাড়া সারাদেশে মাদকের বিষ ছড়িয়ে পড়তে পারত না। সচেতন আম-আদমি জানতে চায় যেসব আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা নিয়মিত মাদকের আখরা থেকে টাকা নিতেন তাদের ক'জনকে নিহত মাদক বিক্রেতাদের ভাগ্য বরণ করতে হয়েছে।
আর গোত্র অনুসারীদের 'পুষ্টি' যোগান দেয়ার যে বিস্তৃত নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে তাতে আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোর খবর হয়ে যাচ্ছে। বাজারের নিয়ম এখানে খাটছে না। খরচ বাড়ছে উন্নয়ন প্রকল্পের। আমাদের কোন প্রতিষ্ঠানই লম্বা সময়ের জন্য টিকে থাকতে পারছে না।
'বন্দুকযুদ্ধে' যেসব মাদক-বিক্রেতা মারা পড়ছেন তাদের সামনে জীবিকা বেছে নেওয়ার খুব কম বিকল্পই সামনে ছিল। উন্নত ও মর্যাদাকর জীবিকা তৈরির দায়িত্ব রাজনীতিবিদদের বিভিন্ন নীতি গ্রহন ও প্রয়োগের মাধ্যমে। অথচ প্রতিপক্ষকে কোনঠাসা করতে গিয়ে তারা গড়ে তুলেছেন ক্যাডার নির্ভর  গোত্র সংস্কৃতি। আমরা, আম-আদমি যারা, বেদনার সাথে লক্ষ্য করছি চলমান মাদক বিরোধী যুদ্ধ পরিচালনাকারীদের বিবেচনা থেকে এই সমীকরণটি একেবারে লাপাত্তা হয়ে গেছে।

Tuesday, June 12, 2018

প্রয়োজন বিদেশি উপদেষ্টার

অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাবিত বাজেটের পর সংসদের ভেতরে ও বাইরে তাকে নিয়ে তীব্র সমালোচনা চলছে। আর্থিক খাত কেলেঙ্কারির পুরো দায় সবাই তাঁর উপরই চাপাতে চায়। সর্বশেষ ব্যাংকগুলোর উপর কর-কমানোর প্রহস্তাবগুলোও অনেকেই ভালো চোখে দেখেনি। এ লেখার উদ্দেশ্য তাঁর ও তাঁর বাজেটের সমালোচনা নয়, বরং ভবিষ্যতে অর্থমন্ত্রী, উপদেষ্টা ও বিভিন্ন ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে আমরা কি ধরণের লোক দেখতে চাই সেবিষয়ে আমার পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা ।
ভবিষ্যতে যে সরকারই আসুক আমার মনে হয় না বিগত  বছরগুলোতে আর্থিক খাতে যে সুনামি বয়ে গেছে তাতে কোন পেশাদার আর মেরুদন্ডওয়ালা লোকজন এসব পদে বসতে চাইবেন। কেউই চাইবেননা রাজনৈতিক দলগুলো তাঁর ঘাড়ে বন্দুক রেখে  শিকার করুক।
সমাধান হচ্ছে এসব পদের জন্য বিদেশি খোঁজা, বাংলাদেশি দ্বৈত নাগরিক নয়। আইনে কি আছে জানি না, তবে আইন বাঁধা হয়ে দাড়ালে মন্ত্রী ছাড়া অন্য পদগুলোর জন্য পেশাদার বিদেশিদের খুব দরকার। তাঁরা সরকারের লক্ষ্যের ফর্দ নিয়ে কর্মপরিকল্পনা তৈরি করবেন , সেভাবে তাঁদের দল গঠন করবেন আর লক্ষ্য পূরণে কাজ করে যাবেন।
বছরখানেক আগে  আমি বিভিন্ন পেশায় বিদেশিদের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে একটি লেখা লিখেছিলাম। আমাদের দেশে গোত্রীয় রাজনীতির কারণে দেশীয় পেশাজীবিদের ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক সরকারের সময়ে সেভাবে স্বচ্ছন্দ ও তৃপ্তি নিয়ে কাজ করতে পারেন না।
নিজ গোত্রের সরকারের সময় একজন পেশাজীবি তাঁর কর্মক্ষেত্রে যে স্বচ্ছন্দ ও তৃপ্তি(ইউিটিলিটি) পান, ভিন্ন গোত্রের সময়ে সেটি পাননা। অনেক সময় তাকে নানা ধরনের প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হয়।
একজন বিদেশির সেসব ঝামেলা নেই। তিনি সব গোত্রের সরকারের সময়ে একই স্বচ্ছন্দ ও তৃপ্তি নিয়ে কাজ করেন। ফলে নির্ধারিত লক্ষ্য পূরণে তাঁর কাজ করে যাওয়াটা বেশ সহজ।
এর বাইরে আমাদের দেশের "আমরা-আমরাইতো"  সংস্কৃতি  পেশাজীবিদের উৎকর্ষতা অর্জনের ক্ষেত্রে অন্তরায়। বিদেশিদের নিয়োগ এটি আমূল বদলে দেবে বলে আমার ধারণা।
আর আমাদের দেশে ভিন্ন গোত্রের পেশাজীবিদের অন্ন গোত্রের লোক ও বিভিন্ন এজেন্সির মাধ্যমে চোখ-রাঙানি , হয়রানি ও ব্ল্যাকমেইলিং এর শিকার হতে হয়। বিদেশিদের নিয়োগের ফলে এর প্রকোপ হয়ত কিছুটা কমবে।
অনেক সময় দেখা যায় গোত্র সরকারগুলোতে এধরনের উঁচু পদের লোকজনের দ্বিমত হবার সুযোগ খুব কম। ফলে তাঁদের অনিচ্ছা সত্ত্বেও অনেক অপ্রিয় কাজে সায়, যা অনেক ক্ষেত্রেই অনৈতিক, দিতে হয় অথবা একেবারে সরকারের শেষ সময় পর্যন্ত রয়ে যেতে হয়।
বিদেশিদের আত্মমর্যাদা একটু বেশি হওয়ায় তাঁরা অন্যায় আব্দারের কাছে মাথানত না করে বরং পদত্যাগ করে চলে যাবেন। আর খুব বেশি অসুবিধায় পড়লে সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাস তাঁদের পাশে দাড়াবে। কাজেই আমাদের গোত্রদ্বন্দ্বে-নাকাল দেশে ও দুর্নীতিতে জর্জরিত সমাজে তাঁরা বেশ ভালভাবেই লক্ষ্যপূরণে কাজ করে যেতে পারবেন।
অনেকেই দেশপ্রেমের দোহাই দিবেন। তথাকথিত দেশপ্রেমিক পেশাজীবিদের দৌরাত্ম্য -এ দেশের অর্থনীতির যে বারোটা বেজেছে সেটিতো আর নতুন করে বলতে হবে না। আর দু'টি খাতে বিদেশিদের অবদান কিন্তু স্বীকার করতেই হবে। একটি হল ক্রিকেট , অন্যটি তৈরি পোশাক খাত। অন্যান্য খাতেও তাঁদের অবদান বিস্তৃত করা যায়। আর মধ্যপ্রাচ্যের বহুদেশে  এ ধরণের পদগুলো অলঙ্কৃত করছেন বিদেশিরা।
বাংলাদেশ সরকারের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা বা বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর  পদ নিতে ক'জন বিদেশি রাজি হবেন সেটিও দেখার বিষয়। তবে বাংলাদেশ তো মোটামুটিভাবে সফল কোন মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি'র চেয়ে কম নয়। চাইলেই অনেককে এ ধরণের পদের জন্য অনেককে পাওয়া যাবে।
আমার নিজস্ব অভিমত হচ্ছে বিদেশি কোন সরকারের/প্রাদেশিক সরকারের উপদেষ্টা, বহুজাতিক কোম্পানির সাবেক প্রধান নির্বাহি বা নিরীক্ষা বিভাগের প্রধান, মার্চেন্ট ব্যাংকার, চার্টার্ড একাউন্ট্যান্ট,বিনিয়োগ /কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ এধরণের লোকজন।
ভাল হয় ইউরোপিয়ান/আফ্রিকান যাঁর মধ্যপ্রাচ্য বা আফ্রিকার দেশগুলোতে কাজ করবার অভিজ্ঞতা রয়েছে। পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে চাইলেই এধরণের বহু পেশাজীবি পাওয়া যাবে। এসব দেশের সরকার আর রাজনীতির বিবর্তন অনেকটা উপমহাদেশের মতই। এছাড়া ক্রোনি ক্যাপিটালিজম আর দুর্নীতির সাথে কাজ করবার অভিজ্ঞতাও এঁদের আছে। লম্বা সময়ের জন্য তাঁরা এখানে কাজ করবেন কিনা সেটি একটি প্রশ্ন।
একটা প্রশ্ন উঠতে পারে বিপুল অর্থ ব্যয়ে তাঁদের নিয়োগ নিয়ে। এখানে যেটি বিবেচনায় নিতে হবে সেটি হল পেশাদারিত্ব আর স্বাধীনভাবে কাজ করবার সক্ষমতা।আমাদের দেশের পেশাজীবি গোষ্ঠি, নিরপেক্ষ হলেও, দেশের কদর্য গোষ্ঠিতন্ত্রের কারণে সেটি পারেন না। নানাভাবে তাঁদেরকে ভয় আর হয়রানির মাধ্যমে কোনঠাসা করে রাখা হয়।  সেনানির্ভর একটি গোষ্ঠি প্রচলিত অবস্থার খুব একটা পরিবর্তন চায় না রাজনীতির উপর তাদের কব্জা বজায় রাখার জন্য। ফলে হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে। আর গোষ্ঠিবাজরা দেশপ্রেমের ধুয়ো তুলে ভবিষ্যতের আবাস করছেন বিদেশে।
বিদেশিরা এসব নানা ধরণের প্রভাববলয় থেকে অনেকটাই মুক্ত। ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোন কারণও তাঁদের নেই। তাঁদের সুশাসনের কারণে অবস্থার যে উন্নতি ঘটবে সেটিকে বিবেচনায় নিয়ে তাঁদের নিয়োগকে দেখতে হবে। আর ইউটিলিটি তত্ত্ব প্রয়োগ করে আমরা দেখলাম যে এ ধরণের পদক্ষেপের যথেষ্ট যৌক্তিক ভিত্তি রয়ে গিয়েছে।

Sunday, June 3, 2018

মন্দা ঈদ বাজার


ঈদ বাজার বেশ মন্দা যাচ্ছে বলেই মনে হচ্ছে এ বছর। তারপরও পুরো রোজা শেষ হলে বোঝা যাবে বেচা-কেনা ঠিক কিরকম ছিল। ঈদের শেষ ক'দিন আর চাঁদ রাতে বেচা-কেনা সব অনুমানকে হার মানায়।



আমার এরকমটা মনে হবার কারণ অমূলক নয়। পেছনে রয়েছে বেশ কিছু কারণ।



১. রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা আর নির্বাচনের বছরের জন্য একটি গোষ্ঠি সেভাবে ব্যবসার ময়দানে সরব নয়। ঈদ বাজারে তাদের লগ্নি সেভাবে নেই। তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত রাজনীতি সংশ্লিষ্ট এই গোষ্ঠির টাকা বাজারে সেভাবে খাটবে না।



২. বর্ষার কারণে আর চলমান মাদক-বিরোধী হত্যাকান্ডের কারণে ফুটপাথের বাজার, যেখানে রাজনৈতিক দলের কব্জায় সবকিছু, সেভাবে জমে উঠেনি। এছাড়া চলমান উন্নয়নমূলক বেশ কিছু কাজের জন্য ঢাকার বেশ কিছু জায়গায় ফুটপাথে সেভাবে কোন বাজার বসতে পারেনি, এখন পর্যন্ত।



৩. বেশ কিছু বাজারে ক্রেতা খরা চলছে। একটি প্রতিবেদন অনুসারে মিরপুর বেনারসি পল্লি এ ভরা মৌসুমে এবছর সবচেয়ে কম ক্রেতা সমাগম হয়েছে এখন পর্যন্ত। বড় বড় সুপার মার্কেটগুলোর ক্রেতা আকর্ষণে সেভাবে কোন বিশেষ অফার বা ছাড় নজরে পড়েনি। প্রচার মাধ্যমগুলোতেও সেরকম কোন বিজ্ঞাপন এখন পর্যন্ত নজরে আসছে না।



৪. বিভিন্ন ধরণের ব্র্যান্ডগুলোও কিন্তু সেভাবে ঈদ নিয়ে এ বছর এখন পর্যন্ত বিশেষ প্রচারণা চালায়নি । যেমন মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোর বিশেষ অফার নিয়ে বিজ্ঞাপন এখন পর্যন্ত নেই। এদের কাছ থেকেই গণমাধ্যমগুলো এসময় বেশ বিজ্ঞাপন পেয়ে থাকে। এবছর সেটিরও কিছুটা ব্যত্যয় ঘটেছে বলেই মনে হচ্ছ।



৫. রোজার শুরুতেই বেশ কিছু মার্কেটে কাস্টম্স ও পুলিশের অবৈধ পণ্যের বিরুদ্ধে তথাকথিত অভিযান ব্যবসায়ীদের কিছুটা সন্ত্রস্ত করেছে। অনেক জায়গায়ই তারা দোকানিদের প্রতিরোধের মুখে পড়েন। কেউ কেউ অভিযোগ করছেন ব্যবসায়ীদের হয়রানি করতেই এই অভিযান। নয়ত তারা এভাবে প্রতিরোধের মুখে পড়তেন না। আর অভিযানের জন্য এই সময়টাকে বেছে নেওয়াকেও অনেকে ভাল চোখে দেখছেন না। কেউ কেউ টিপ্পনি কাটছেন কেরানিদের বখরার খরা কাটাতেই কিনা এই অভিযান।


[৬. কেরানিগঞ্জের পোশাকের পাইকারি বাজারে কিছুটা প্রাণ এলেও বিগত বছরের মন্দাভাব এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি। এখান থেকেই সারা দেশের মার্কেটগুলোতে পোশাক যোগান দেয়া হয়। বেশ কয়েক বছর ধরে কেরানিগঞ্জের পোশাকের বাজার চিনা সস্তা পোশাকের দখলে।


৭.প্রতিবেশি কিছু দেশে যাতায়াত বেশ সহজ হয়ে যাওয়ায় ধনী মধ্যবিত্তের বড় অংশ ঈদের আগে সেসব দেশ থেকেই কেনাকাটা সারেন। সম্প্রতি এ প্রবণতা আরো বেড়েছে।]





ঈদ শেষেই বলা যাবে হলফ করে কেমন গেল এ বছরের ঈদ বাজার। তবে বড় বড় ব্র্যান্ড আর নিচু তলার ব্যবসায়ীদের বাজার জ্ঞান বেশ টনটনে। বাজারো তাদের আচরণ দেখে বোঝা যায় ঈদ বাজার ভাল যাচ্ছে না।

যাত্রা হলো শুরু


আমার বাঙলা ব্লগে আপনাকে স্বাগতম।